পেটের দায়ে নারীরা যেখানে ঘানি টানছেন

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ০৬ জুন, ২০১৩, ০৯:২৫:৩৪ সকাল



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, দেশের সবচেয়ে বড় চার পদে নারীর অবস্থান। সত্যিই তাই, প্রধানমন্ত্রী নারী,বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী এবং যেখানে জাতীয় সংসদের স্পীকারও নারী সেদেশের নারীদের কী অবস্থা তা দেখতে হলে আপনাকে একটু গ্রামে ফিরতে হবে। আর যদি বগুড়ার তালোড়ার কথা বলি তাহলে সেখানে এলে দেখতে পাবেন পেটের দায়ে এখানে নারীরা কলুর বলদের পরিবর্তে নিজেরাই ঘানি টেনে টেনে জীবন পার করছেন। যা দেখলে আপনার মনে হতে পাওে আমরা কী একুশ শতকের বাংলাদেশে আছি নাকি প্রাচীন দাস যুগে ফিওে গেছি।

একুশ শতকের এই যান্ত্রিক যুগেও প্রাচীন দাস যুগের মত জীবন কাটাচ্ছেন বগুড়ার আব্দুল গোফফার। কলুর বলদের কথাও যখন মানুষ ভুলতে বসেছে, ঠিক সেই সময়েও মানুষকে দিয়ে ঘানি টানিয়ে তেলের ঘানি বানাচ্ছেন তিনি। এভাবেই দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই পেশায় টিকে আছেন গোফফার। এছাড়া তার কোন উপায় ছিলনা সংসার চালানোর। তাই দু:খ করে বললেন “নয়জন ছেলে মেয়ের সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে তেলের ঘানি টানতে টানতেই জীবন পার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমার”।

নিজ চোখে না দেখলে অথবা ছবি না দেখলে কারো বিশ্বাসই হবে না আব্দুল গোফফারের এই জীবন সংগ্রামের কাহিনী। দেখলেও মনে প্রশ্ন জাগবে এটাও কি সম্ভব এই যুগে?

মেশিন তো দুরের কথা, গরু মহিষ দিয়েও ঘানি টানানোর সামর্থ নেই তার। তাই অগত্যা অভাবী নারীদের দিয়ে ঘানি টানিয়ে তেলের ঘানি বানাচ্ছেন ৪৫ বছর ধরে। সেটা করেও আর সংসার চলে না আগের মত। সব কিছুর দাম বাড়লেও সে তুলনায় দাম বাড়েনি তার হাতে তৈরী তেলের ঘানির। এজন্য আক্ষেপের শেষ নেই গোফফারের। কিন্ত কে শোনে তার সেই দু:খের কথা।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়ার শাহপাড়ার আব্দুল গোফ্ফার এভাবেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রথম জীবনে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে দিন কেটেছে তার। দরিদ্র ঘরে জন্ম। সংসারে অভাব অনাটন সর্বদা লেগেই থাকতো। তার ওপর নয় জন ছেলে মেয়ে। তাদের নিয়ে অর্দ্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে গিয়ে হঠ্যাৎ করে হাতে তৈরী তেলের ঘানী বানানো শুরু করেন তিনি।

প্রথমে ধার দেনা করে আকর,কুড়াল,করাত ক্রয় করে কাজে মনোনিবেশ করেন। নিজ বাড়ির উঠানেই গড়ে তোলেন হাতে তৈরী তেলের ঘানির কারখানা।

আব্দুল গোফফার জানান,তার হাতে বানানো ঘানি বগুড়া ছাড়াও ঢাকা , নওগাঁ,সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া, সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরিষার মিলে সরবরাহ্ করেন।

তেতুল গাছ কিনে বাড়ীতে এনে করাত,কুড়াল দিয়ে কাঠ কেটে ঘানির প্রাথমিক অবয়ব তৈরী করেন। এর পর লস্বা বাঁশের মাঝখানে আকর বসিয়ে বাঁশের দুমাথায় নারীদেও দিয়ে ঘুরিয়ে পূর্নাঙ্গ ঘানি তৈরী করেন। এ কাজের জন্য তার কারখানায় ১৬ জন দুস্থ নারী গরুর মত শ্রম দেয়। গোফফারের এই কারখানায় গ্রামের অভাবী মহিলারা পশুর মত বাঁশ টেনে টেনেই অর্থ উপার্জন করেন।

তারপরেও তাদেও কাছে এভাবে বেঁচে থাকার আনন্দই অনৈক কিছু। এভাবে কাঠের ঘানি তৈরী করে মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি। তার আয়ের সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী অভাবী মহিলারাও শ্রম দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

বয়সের ভাওে ন্যুব্জ আব্দুল গোফ্ফার জানান তিনি ৪৫ বছর ধরে ঘানি তৈরীর কাজ করে এখন আর শরীওে কাটায় না। তাই বড় ছেলে মোজাহারকে সহযোগী হিসাবে কাজ করাচ্ছেন।

আব্দুল গোফফারের আশা কোন বেসরকারী সংস্থা বা ব্যাংক যদি সুদমুক্ত ঋন দিত তাহলে হয়তো মানুষকে দিয়ে ঘানি না টানিয়ে মেশিন দিয়ে ঘানি টানাতেন। এতে তার আয়ও বেশি হতো আর পরিশ্রমও কমতো।

বিষয়: Contest_mother

১৩১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File